সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মাত্র ৫ বছর বয়সে মা যে শিশু


সবচেয়ে অল্প বয়সে মা হয়েছে এমন একটি মেয়ের বয়স কত হতে পারে? ভাবতে গেলে সেটা বড়োজোর ৯/১০ বছরে গিয়ে ঠেকবে। স্বাভাবিকভাবে কেউ কি ভাবতে পারে মাত্র ৫ বছরের শিশুও সন্তানের জন্ম দিয়েছিল? আবারো ভেবে দেখুন ৫ বছরের একটি শিশু কিন্তু ‘কেবলই শিশু’ থাকে। এই বয়সে মেয়েরা হাফ পেন্ট পড়ে মাটির তৈরি খেলনা হাড়ি-পাতিল দিয়ে খেলা করে বেড়ায়। কিছুদিন আগেও প্রস্রাব করে বিছানা ভিজিয়ে ফেলতো।

ব্যাপারটা অবাক করার মতো হলেও সত্য যে মাত্র ৫ বছর বয়সেই মা হয়েছিল ‘লিনা মেডিনা’ নামের এক শিশু। জন্মদানের সময় বয়স ছিল পাঁচ বছর সাত মাস। জন্ম দেয়া সন্তানটি ছিল সম্পূর্ণ সুস্থ এবং এমনকি সেই সন্তান ৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচেওছিল। গর্ভধারণ অবস্থায় বাবা-মা তার অস্বাভাবিক পেট দেখে মনে করেছিল পেটে বুঝি টিউমার হয়েছে। পরে ডাক্তার জানায় মেয়েটি গর্ভবতী। এমন খবরে বাবা-মা তো একদম থ।

ছেলে কোলে সর্বকনিষ্ঠ মা


  • পরিচয়

লিনা মেডিনা (Lina Medina) ১৯৩৩ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর পেরুর হানকেভ্যালিকায় জন্মগ্রহণ করে। মেডিনাই এখন পর্যন্ত সফলভাবে সন্তান জন্মদানকারিণী সর্ব-কনিষ্ঠ মা। বর্তমানে তার বয়স ৮৩ বছর। তিনি পেরুর লিমা শহরে বসবাস করছেন।

ডাক্তারের কোলে নবজাতক ও বেডে শায়িত অবস্থায় মা।


  • প্রথম দিকের কথা

মেডিনার বয়স যখন পাঁচ তখন তার বাবা-মা পেটের অস্বাভাবিক আচরণ খেয়াল করেন। পেটের আকার ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়াতে তাকে নিয়ে এলেন হাসপাতালে। বাবা-মায়ের ধারণা ছিল পেটে টিউমার হয়ে থাকবে হয়তো। টিউমারের কারণে পেট ফুলে আছে। কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তার জানায় সে সাত মাসের গর্ভবতী।

এমন কেস দেখে ডাক্তার নিজেও কিছুটা অবাক হন। নিজের হাতে পরীক্ষা করে দেখার পরেও মনে হচ্ছে কেমন যেন একটা অনিশ্চয়তা রয়ে গেল। এত ছোট বাচ্চার মা হবার ঘটনায় অবাক হবারই কথা। নিশ্চিত হবার জন্য তিনি আরো একজন বিশেষজ্ঞের নিকট মেডিনাকে দেখালেন। ঐ বিশেষজ্ঞ তখনকার সময়ে খুব বিখ্যাত ছিলেন। তিনিও একই কথা জানালেন, মেয়েটি গর্ভবতী।

মুখরোচক এই খবর নিয়ে ঐ সময়কার কয়েকটি সংবাদপত্রে খবর বেরোয়। এরকম খবরের চাহিদা থাকে, পত্রিকার জন্য ভাল রসদ, তারা যে এটা ফলাও করে প্রকাশ করবে তা আর ব্যতিক্রম কী? তাকে নিয়ে মোটামুটি হৈ-চৈ অবস্থা হয়ে যায়। ১৯৩৯ সালের ১৪ই মে মেডিনা সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। এত অল্প বয়সে সন্তান জন্ম দেবার মতো উপযুক্ত পেলভিস তার ছিল না, থাকার কথাও নয়। সেই কারণেই সিজারিয়ানের আশ্রয় নিতে হয়েছিল।

এক গবেষণায় বলা হয় তিন বছর থেকেই তার নিয়মিত ঋতুস্রাব হতো। অন্য আরেক প্রতিবেদন বলে আড়াই বছর থেকেই তার ঋতুস্রাবের শুরু। এটা কীভাবে সম্ভব? এখানেই শেষ নয়, প্রতিবেদনে বলা হয় চার বছর বয়স থেকেই তার স্তনের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ হতে থাকে। বয়স যখন পাঁচ বছরের মাঝামাঝি তখন তাকে গর্ভবতী মায়ের মতো দেখায়। ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার দেখতে পায় তার মাঝে মা হবার পূর্ণ যোগ্যতা ও সামর্থ্য আছে।

২ বছর বয়সী ছেলের সাথে শিশু মা 

  • সন্তান

জন্ম দেয়া পুত্র সন্তানটি সুস্থভাবেই ভূমিষ্ঠ হয়, প্রাথমিক অবস্থায় ভর ছিল আড়াই কেজির উপরে (২.৭ কেজি)। কিছুদিন পর মেডিনার পরিবার তাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে আসে এবং সিদ্ধান্ত নেয় নবজাতক পুত্র তার মাকে বোন হিসেবে জানবে। ১০ বছর পর্যন্ত সন্তান তার মাকে বোন বলেই ডাকতো। সুস্থভাবেই বেড়ে উঠে কিন্তু ৪০ বছর বয়সে বোন ম্যারো (Bone Marrow) রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করে। উল্লেখ্য মা তথা লিনা মেডিনা এখনো বেঁচে আছে।


  • পরবর্তী জীবন

মেডিনা কখনোই তার সন্তানের বাবা কে তা প্রকাশ করেনি বা করতে পারেনি। হয়তো এমন বয়সে বুঝতোও না মা হতে কী কী যোগ্যতা লাগে, সন্তানের জন্য বাবারই বা ভূমিকা কী। এই সন্তানের পিতা কে তা আজ পর্যন্তও জানা যায়নি। এখনো রহস্যই থেকে গেল। উল্লেখ্য মেডিনার বাবাকে শিশু যৌন নিপীড়নের অভিযোগে আটক করা হয়েছিল কিন্তু কোনো তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় পরে ছেড়ে দেয়।

পরবর্তীতে মেডিনা একটি হাসপাতালে কাজ করে, হাসপাতালের ডাক্তার যিনি তার সন্তান প্রসব সংক্রান্ত সবকিছু দেখাশুনা করেছিলেন তার লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছিল। পাশাপাশি মেডিনার সন্তানের লেখাপড়ার ব্যবস্থাও করেন। বর্তমানে মেডিনা তার স্বামীর সাথে বসবাস করছেন। স্বামীর নাম রাওল জোরাডো।

শিশুটি মেডিনাকে বোন হিসেবে জেনে বড় হয়েছিল

  • কীভাবে সম্ভব

কেউ কেউ বলে থাকে এটা একটা গুজব ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু একজন ডাক্তার ঐ সময়েই তাকে নিয়ে গবেষণা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে এটি কোনো গুজব বা মিথ্যা ঘটনা নয়। তখনকার সময়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে যে যে প্রযুক্তি ছিল মোটামুটি সবই ব্যাবহার করা হয়েছিল এই কেসটিতে। এর মাঝে এক্স-রে আর বায়োপ্সিও আছে। ঐ সময়ে তার কিছু ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। এই ছবিগুলো কী বলে? এই ছবিগুলো কি গুজবকে সত্য বলে রায় দেয়?

যেহেতু সন্তানের বাবা সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না তাই তার শিশু বয়সে মা হবার ক্ষেত্রে দুটি কারণ অনুমান করা যায়- ১. অনাকাঙ্ক্ষিত যৌনতার শিকার; ২. ছেলেটা তার যমজ ভাই।


ছেলেটা কিভাবে তার জমজ ভাই হয় ? 

তার গর্ভ থেকে আসা সন্তান কীভাবে তারই যমজ ভাই হতে পারে? ব্যাপারটা একটু চমকপ্রদ। পেটের ভেতর বাচ্চাও সহোদর হতে পারে। এমন বিপত্তিকর শর্তে এমনকি একজন পুরুষের পেটেও বাচ্চা হতে পারে।

মায়ের পেটে যখন যমজ সন্তানের উদ্ভব হয় তখন দুটি আলাদা আলাদা ভ্রূণের সৃষ্টি হয়। ভ্রূণ দুটি পাশাপাশি অবস্থান করে। পাশাপাশি অবস্থান করা দুই ভ্রূণের কোনো একটি ভ্রূণ তুলনামূলকভাবে অধিক পরিমাণ খাদ্য-পুষ্টি গ্রহণ করে অপর ভ্রূণের চেয়ে সবল ও বড় আকারের হয়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় কোনোভাবে ছোট ভ্রূণটি যদি বড় ভ্রূণের ভেতরে ঢুকে যায় বা বড়টি ছোটটিকে গ্রাস করে নেয় তাহলে ভেতরে থাকা ভ্রুণটি আর বিকশিত হতে পারে না।

ছোটটিকে ভেতরে দমিয়ে রেখে বড়টি ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে এবং এক সময় ভেতরে রেখেই মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে আসে। ছোটটি তখন খাদ্য গ্রহণ করে থাকে বড়টির দেহ হতে। বড়টি যখন বাইরের পৃথিবীতে খেলছে দুলছে তখন ভিতরে ছোটটি অল্প অল্প করে আকারে বাড়ছে। দেখতে দেখতে একসময় সকলে লক্ষ করে খেলাধুলা করে বাড়ানো ছেলে/মেয়েটির পেট ফুলে উঠছে ধীরে ধীরে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সকলে মনে করে পেটে টিউমার হয়েছে। প্রথম দিকে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খায় বা সামান্য চিকিৎসা করে চালিয়ে দেয়। কিন্তু এমন সমস্যা কি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধে কিংবা টোটকা ওষুধে শেষ হবার জিনিস? সমস্যার সমাধান না হলে একসময় প্রচুর ব্যাথা ও যন্ত্রণা হয়। এমন পরিস্থিতিতে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো হলে দেখা যায় পেটে বাচ্চা।

স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে এই পদ্ধতিতে বাচ্চা নারীর পেটেও হতে পারে আবার পুরুষের পেটেও হতে পারে। এখানে উল্লেখ রাখা দরকার এসব অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চাগুলো পূর্ণ বিকশিত হয় না, ত্রুটিপূর্ণ ও অবিকশিত হিসেবে জন্ম দেয়। কোনো কোন ক্ষেত্রে বাচ্চা বলতে যা বোঝায় তাও হয় না।

এখানে আরো একটা কথা বলার থাকে, যদি ধরে নেয়া হয় বাচ্চা বেঁচে গেল কোনোভাবে, সুস্থই রইল কয়েক বছর, তবুও সে বায়োলজিকালী তার সন্তান নয়। শিশুটি হবে তার ভাই অথবা বোন। কারণ তারা জমজ হিসেবে মায়ের পেটে উৎপত্তি লাভ করেছিল।

 







মন্তব্যসমূহ

Popular post

নিকোলা টেসলাঃ ভুল সময়ে জন্ম নেয়া কিংবদন্তী।

  নিকোলা টেসলাঃ ভুল সময়ে জন্ম নেয়া কিংবদন্তী।  টেসলার জন্মকাহিনীঃ    কথিত আছে, টেসলার জন্ম হয় প্রচণ্ড ঝড় ও বজ্রপাতের রাতে। এরকম ঘটনাকে অশুভ সংকেত মনে করে সেই সময়ে ধাত্রী টেসলাকে ‘অন্ধকারের সন্তান’ (Child Of Darkness) বলেন। কিন্তু এতে টেসলার মা অপমানিত বোধ করে এর বিরোধিতা করে বলেন, টেসলা হবে ‘আলোর সন্তান’ (Child of Light); টেসলার মায়ের সেই ভবিষ্যৎ বানী যে কতটা কার্যকর ছিল তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না !  টেসলার দূরদৃষ্টি এবং বেতার ইন্টারনেট : টেসলা তার সব চমৎকার উদ্ভাবনী চিন্তা বাস্তবে রূপান্তর করে যেতে পারেননি। তিনি ওয়্যারলেস পাওয়ার ট্রান্সমিশন নিয়ে বহু গবেষণা করেন। সেই ১৯০১ সালেই তিনি এসবের কথা চিন্তা করেন যার সুফল আমরা এখন ভোগ করছি। তিনি রেডিও জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে ‘ডেথ-রে’ (death-ray) নামক একটা কণার কথা চিন্তা করেন যার বাস্তব কোন রূপ তিনি দিয়ে যেতে পারেননি। টেসলার জাদুকরী স্মরণশক্তি : বিজ্ঞানী টেসলার স্মরণশক্তি এতটাই তীক্ষ্ণ ছিল যে তিনি একটা বই পড়লে তার প্রতিটি লাইন ও ছবি সহ বিশদভাবে মনে করতে পারতেন । তার প্রখর কল্পনা শক্তির কারণে ছোটবেলায় প্রায়ই ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখতেন। প