সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খাবার নিয়ে ভুল ধারনা।

খাবার নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছু ধারণা বা বিশ্বাস চালু আছে অনেক দিন ধরে। যার মধ্যে কিছু আছে ভুল ও অযৌক্তিক, কোনো কোনোটি আবার যৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত। শুধু গ্রামে নয়, শহুরে অনেক শিক্ষিত মানুষও এসব মেনে চলেন। 


  • কলা খেলে ঠান্ডা লাগে?

ঠান্ডা, কাশি ও জ্বরের সময় কলা খেতে দেওয়া হয় না। বলা হয়, কলা খেলে ঠান্ডা লাগবে। কলায় উচ্চমাত্রার হিস্টামিন থাকে, যা মিউকাস ও শ্লেষ্মার পরিমাণ বাড়ায়। তাই শ্বাসতন্ত্রের কোনো রোগ যদি ১৪ দিনের বেশি থাকে, সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন কলা খাওয়া যেতে পারে। তবে শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডা-কফ বা শ্বাসতন্ত্রের রোগে কলা সাময়িকভাবে না দেওয়াই ভালো। কিন্তু জেনে রাখুন, কলায় এমন কোনো উপাদান নেই, যা ঠান্ডা-সর্দি-কাশি তৈরি করবে।

  • তেঁতুল খেলে প্রেশার কমে.?

তেঁতুল পটাশিয়ামের খুব ভালো উৎস, যা সরাসরি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত। তবে অনেকে প্রেশার কমাতে প্রচুর লবণ দিয়ে তেঁতুলপানি গুলে খান, যা প্রেশার আরও বাড়ায়। তা ছাড়া রক্তচাপ বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াই বাঞ্ছনীয়, তেঁতুলের ওপর ভরসা করলে চলবে না। তবে প্রতিদিন রান্নায় তেঁতুলের ব্যবহার করলে বা শাক-রসুন দিয়ে করা তেঁতুলের টক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণসহ রক্তের বাড়তি চর্বি কমাতেও সাহায্য করে।

  • গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া যাবে না

আনারসে ব্রোমেলিন এনজাইম থাকে। অতিরিক্ত ব্রোমেলিন জরায়ুর সংকোচন-প্রসারণ বাড়ায় ও সারভিক্সকে নরম করে, এ কারণে অসময়ে সংকোচন তৈরি হতে পারে। তবে একটা আনারসে যে পরিমাণ ব্রোমেলিন থাকে, তা মোটেই গর্ভবতী নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু দিনে যদি ৮ থেকে ১০টি আনারস একসঙ্গে খাওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। একজন গর্ভবতী নারী নির্ধারিত সার্ভিং অনুযায়ী দৈনিক আনারস খেতে পারবেন।

  • লেবু খেলে চর্বি কাটে

লেবুতে চর্বি ঝরানোর নির্দিষ্ট কোনো উপাদান বা বৈশিষ্ট্য নেই। তবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে বলে বিপাকের গতি বাড়িয়ে লেবু হজম ক্ষমতা বাড়ায়। আর দেহের বিপাকের গতি যত বাড়বে, ওজন কমার গতিও তত বাড়বে। তাই সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও ব্যায়াম না করে শুধু লেবু খেলেই চর্বি কাটবে না।

  • আনারস ও দুধ একত্রে খেলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে

এটি একেবারেই ভুল ধারণা। তবে আনারসের ব্রোমালিন এনজাইম এবং দুধের কেজিন প্রোটিন একসঙ্গে হয়ে ছানা তৈরি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে কারও কারও পাতলা পায়খানা বা সাময়িক বদহজম হতে পারে, সেটাও সবার ক্ষেত্রে নয়।

  • ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়বে

একটি ডিমে মোট ফ্যাট থাকে ৪ দশমিক ৬ গ্রাম (১ চা চামচ) যার ভেতর ১ কোয়ার্টারের মতো থাকে কোলেস্টেরল। এই পরিমাণের কোলেস্টেরল আমাদের যকৃৎ স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করে ফেলে। যাঁদের রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি, হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোকের ইতিহাস আছে, তাঁরা পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খেতে পারবেন। একজন মানুষ আমিষের আদর্শ উৎস হিসেবে প্রতিদিন ডিম খাবেন। কিন্তু বয়স, ওজন, শারীরিক অবস্থাভেদে সপ্তাহে কয় দিন কুসুমসহ খাবেন, কয় দিন সাদা অংশ খাবেন, তা জেনে নিতে হবে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় স্যাচুরেটেড ও ট্রান্সফ্যাট–সমৃদ্ধ খাবার। অনেকে বাইরের খাবার ও ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড খান কিন্তু ডিম খেতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন। অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরলের জন্য শুধু ডিমকে দায়ী না করে স্যাচুরেটেড ও ট্রান্সফ্যাট–সমৃদ্ধ খাবার নিয়ন্ত্রণ করুন।

  • কাটাছেঁড়া বা সার্জারিতে টক খাওয়া যাবে না

প্রকৃত ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত। শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে কিংবা সার্জারির পর টকজাতীয় ফল খেলে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে উঠে। কারণ, ওই সব ফলে রয়েছে ভিটামিন-সি, যা ঘা শুকাতে ও নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। এ কারণে এ সময় ভিটামিন সি–জাতীয় ফল যেমন লেবু, কমলা, আনারস, জাম্বুরা, আমড়া, মাল্টা ইত্যাদি খাওয়া উচিত।


ফাহমিদা হাশেম (ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ) 

মন্তব্যসমূহ

Popular post

নিকোলা টেসলাঃ ভুল সময়ে জন্ম নেয়া কিংবদন্তী।

  নিকোলা টেসলাঃ ভুল সময়ে জন্ম নেয়া কিংবদন্তী।  টেসলার জন্মকাহিনীঃ    কথিত আছে, টেসলার জন্ম হয় প্রচণ্ড ঝড় ও বজ্রপাতের রাতে। এরকম ঘটনাকে অশুভ সংকেত মনে করে সেই সময়ে ধাত্রী টেসলাকে ‘অন্ধকারের সন্তান’ (Child Of Darkness) বলেন। কিন্তু এতে টেসলার মা অপমানিত বোধ করে এর বিরোধিতা করে বলেন, টেসলা হবে ‘আলোর সন্তান’ (Child of Light); টেসলার মায়ের সেই ভবিষ্যৎ বানী যে কতটা কার্যকর ছিল তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না !  টেসলার দূরদৃষ্টি এবং বেতার ইন্টারনেট : টেসলা তার সব চমৎকার উদ্ভাবনী চিন্তা বাস্তবে রূপান্তর করে যেতে পারেননি। তিনি ওয়্যারলেস পাওয়ার ট্রান্সমিশন নিয়ে বহু গবেষণা করেন। সেই ১৯০১ সালেই তিনি এসবের কথা চিন্তা করেন যার সুফল আমরা এখন ভোগ করছি। তিনি রেডিও জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে ‘ডেথ-রে’ (death-ray) নামক একটা কণার কথা চিন্তা করেন যার বাস্তব কোন রূপ তিনি দিয়ে যেতে পারেননি। টেসলার জাদুকরী স্মরণশক্তি : বিজ্ঞানী টেসলার স্মরণশক্তি এতটাই তীক্ষ্ণ ছিল যে তিনি একটা বই পড়লে তার প্রতিটি লাইন ও ছবি সহ বিশদভাবে মনে করতে পারতেন । তার প্রখর কল্পনা শক্তির কারণে ছোটবেলায় প্রায়ই ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখতেন। প